বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পাকিস্তানি জঙ্গিদের সঙ্গে মামুনুলের যোগাযোগ: পুলিশ  

  •    
  • ২৫ এপ্রিল, ২০২১ ১৮:২৮

২০০৫ সালে ভগ্নিপতি নিয়ামতউল্লার সঙ্গে মামুনুল ৪০ দিন পাকিস্তানে ছিলেন। সেখানকার একটি ধর্মীয় সংগঠনকে তারা মডেল হিসেবে গ্রহণ করে তা বাংলাদেশের মওদুদীবাদী (জামায়াত), হানাফি, দেওবন্দি, কওমি সকল মতাদর্শের মুসলিমদের মাঝে তা ছড়িয়ে দেয়ার কাজ শুরু করেন।

হেফাজত নেতা মামানুল হক পাকিস্তানি জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন বলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশিদ। জানিয়েছেন কাতার, দুবাই, পাকিস্তান থেকে তার কাছে নিয়মিত টাকা আসত।

তিনি জানান, ভারতের অযোধ্যায় ভেঙে দেয়া বাবরী মসজিদের নামেও টাকা আনতেন হেফাজত নেতা। এতে ধর্মীয় আবেগ কাজে লাগানো যাবে, অন্যদিকে ভারতবিদ্বেষীরাও বেশি করে সম্পৃক্ত হবেন বলে ধারণা ছিল তার। এভাবেও তিনি পেয়েছেন কোটি কোটি টাকা।

মামুনুল হকের একটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হলে সেখান থেকে এসব তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন ডিসি হারুন।

গত ১৮ এপ্রিল মামুনুলকে গ্রেপ্তারের পর দিন তাকে সাত দিনের রিমান্ডে এখন পর্যন্ত কী তথ্য পাওয়া গেল, সেটি জানাতে সোমবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে আসেন এই পুলিশ কর্মকর্তা। এ সময় তিনি এ কথা বলেন।

ডিসি হারুন বলেন, ‘মামুনুল হকের আপন ভগ্নিপতি মুফতি নিয়ামতউল্লাহ ১৫-২০ বছর পাকিস্তানে ছিলেন। সেখান থেকে এসে জামিয়া রহমানিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা শুরুর পর তার সঙ্গে মামুনুলের বোনের বিয়ে হয়। এই নিয়ামতউল্লার সঙ্গে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম আসামি মাওলানা তাজউদ্দিনের বন্ধুত্ব ছিল।’

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর নিয়ামত উল্লাহকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করেছিল। কিন্তু মামুনুল হকের বাবা শায়খুল হাদিস আজিজুল হক ছিলেন চার দলীয় জোটের নেতা। তিনিই বিএনপি সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে নিয়ামতউল্লাহকে ছাড়িয়ে এনেছিলেন।

২০০৫ সালের দিকে নিয়ামতউল্লার সঙ্গে মামুনুলও ৪০ দিন পাকিস্তানে ছিলেন। সেখানকার একটি ধর্মীয় সংগঠনকে তারা মডেল হিসেবে গ্রহণ করে তা বাংলাদেশের মওদুদীবাদী (জামায়াত), হানাফি, দেওবন্দি, কওমি সকল মতাদর্শের মুসলিমদের মাঝে তা ছড়িয়ে দেয়ার কাজ শুরু করেন।

তবে পাকিস্তানের কোন জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে মামুনুলের যোগাযোগ ছিল, সে প্রশ্নের জবাব দেননি হারুন।

নিজ কার্যালয়ে মামুনুল হককে নিয়ে ব্রিফ করছেন মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশিদ

মামুনুল হকের আপন ভায়রা কামরুল ইসলাম আনসারী জামায়াতের বড় নেতা। তার মাধ্যমে জামায়াতের সঙ্গেও গোপন আঁতাত রাখেন মামুনুল।

পুলিশ কর্মকর্তা হারুন বলেন, মামুনুল হক দেশে উগ্রবাদ ছড়ানোর চেষ্টায় ছিলেন। সেজন্য বিদেশ থেকে অর্থ আসত। তার পরিবারের সদস্যদের বিএনপি-জামায়াত ও জঙ্গিদের আঁতাত ছিল।

বিদেশ থেকে আনা টাকা মামুনুল হক দেশের মসজিদ ও কওমি মাদ্রাসাগুলোতে ছাত্রদের মাঝে উগ্রবাদ ছড়াতে খরচ করেছেন বলেও জানানা এই পুলিশ কর্মকর্তা। বলেছেন, ওয়াজের নাম করে তিনি এসব উগ্রবাদ ছড়ানোর কাজ চালিয়েছেন।

গত কয়েক বছর ধরে মামুনুল হকের নানা উগ্র মেজাজী বক্তব্য ফেসবুকে ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে। তিনি বারবার ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের মতো পরিস্থিতি তৈরির হুমকি দিতেন। কর্মী সমর্থকদেরকে বিশিষ্ট রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী এমনকি বিচারকদের ওপর হামলার আহ্বান জানাতেন। বলতেন, তাদের কথা না শুনলে সরকারকে সরে যেতে হবে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু ভারতের সরকার প্রধান নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানানোর বিরোধিতা করে বিক্ষোভে এসেও আক্রমণাত্মক বক্তব্য রাখেন মামুনুল। ২৫ মার্চ বায়তুল মোকাররমের সমাবেশে তিনি বলেন, মোদি বাংলাদেশে এলে সরকার পতনের ক্ষেত্র তৈরি করা হবে।

পরদিন বায়তুল মোকাররমে সরকার সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষের পর চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডব চালায় হেফাজত সমর্থকরা। ডাক বাংলো, ভূমি অফিস, পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয়, আনসান ক্যাম্প তছনছ করে তারা। হামলা হয় হাটহাজারী থানা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার কার্যালয়েও। তখন পুলিশ গুলি চালালে নিহত হয় পাঁচ জন।

২৮ মার্চের হরতাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে ত্রাস তৈরি করে হেফাজত কর্মীরা। সেদিন সরকারি-বেসরকারি ৩৮টি স্থাপনায় ভাঙচুরের পর আগুন দেয়া হয়। সহিংসতা হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশ, মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান, হবিগঞ্জর আজমিরীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জেও।

৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের রয়্যাল রিসোর্টে নারী নিয়ে অবরুদ্ধ মামুনুল হককে উদ্ধার করতে গিয়েও তাণ্ডব চালায় হেফাজত কর্মীরা। স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের পাশাপাশি যুবলীগ ছাত্রলীগের নেতাদের বাসভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া ও সুনামগঞ্জের ছাতকেও আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা হয়।

হঠাৎ তাদের তাণ্ডবে শুরু হয় প্রশ্ন, কেন তারা এত সহিংসতা করছে। এর মধ্যে ১১ এপ্রিল থেকে শুরু হয় পুলিশের অভিযান। একজন নায়েবে আমিরসহ ২৫ জনের বেশি নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয় মামুনুলের গ্রেপ্তার।

আর সবশেষ তার ক্ষমতা লাভের প্রবল ইচ্ছা থেকে হেফাজতকে সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করেছিল মামুনুল হক বলে জানান ডিসি হারুন।

এ বিভাগের আরো খবর